বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫

মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে ১০০ প্রশ্ন উত্তর।

 মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (AML/CFT) একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।


এখানে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে কিছু মৌলিক প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো:


মানি লন্ডারিং (Money Laundering) সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর:


১. মানি লন্ডারিং কি? 

উত্তর: মানি লন্ডারিং হলো অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ (কালো টাকা) বৈধ উপায়ে অর্জিত বলে দেখানোর প্রক্রিয়া। এটি অবৈধ অর্থের উৎস গোপন করার একটি কৌশল।


২. মানি লন্ডারিং এর প্রধান উদ্দেশ্য কি?

 উত্তর: মানি লন্ডারিং এর প্রধান উদ্দেশ্য দুটি: * অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের উৎস গোপন করা। * বৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের ওপর প্রদেয় আয়কর ফাঁকি দেওয়া।


৩. মানি লন্ডারিং এর ধাপগুলো কি কি?

 উত্তর: মানি লন্ডারিং এর সাধারণত তিনটি ধাপ রয়েছে: * Placement (স্থাপন): অবৈধ তহবিল আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করানো। * Layering (স্তরবিন্যাস): একাধিক জটিল লেনদেনের মাধ্যমে অর্থের উৎস গোপন করা। * Integration (একীকরণ): ধৌত করা অর্থকে বৈধ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পুনরায় প্রবেশ করানো।


৪. মানি লন্ডারিং কেন একটি ফৌজদারি অপরাধ?

 উত্তর: কারণ এটি সমাজে আর্থিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, অবৈধ কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের সুযোগ করে দেয় এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।


৫. কালো টাকা বলতে কি বোঝায়? 

উত্তর: কালো টাকা বলতে এমন অর্থকে বোঝায় যা অবৈধ উপায়ে (যেমন: দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান) অর্জিত হয়েছে অথবা বৈধ উপায়ে অর্জিত হলেও যার উপর কর পরিশোধ করা হয়নি।


৬. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধান আইন কোনটি? 

উত্তর: মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫)।


৭. বাংলাদেশ সরকার কেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে? 

উত্তর: মানি লন্ডারিং দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে, আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের পথ সুগম করে। তাই সরকার এর প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।


৮. মানি লন্ডারিং এর ফলে অর্থনীতিতে কি প্রভাব পড়ে?

 উত্তর: এর ফলে বিনিয়োগ কমে যায়, কর্মসংস্থান হ্রাস পায়, উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়। এটি অর্থনীতিতে "আন্তঃরক্তক্ষরণ" হিসেবে বিবেচিত।


৯. ব্যাংকগুলো কিভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তা করে?

 উত্তর: ব্যাংকগুলো গ্রাহক সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ (KYC), সন্দেহজনক লেনদেন পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্ট করা (STR), এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তা করে।


১০. KYC এর পূর্ণরূপ কি এবং এর গুরুত্ব কি? 

উত্তর: KYC এর পূর্ণরূপ হলো "Know Your Customer" (আপনার গ্রাহককে জানুন)। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের গ্রাহকদের পরিচয়, লেনদেনের উদ্দেশ্য এবং অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


১১. STR এর পূর্ণরূপ কি এবং এর ভূমিকা কি? 

উত্তর: STR এর পূর্ণরূপ হলো "Suspicious Transaction Report" (সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট)। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন কোনো লেনদেনকে সন্দেহজনক মনে করে, তখন তারা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) কে STR দাখিল করে।


১২. CTR এর পূর্ণরূপ কি?

 উত্তর: CTR এর পূর্ণরূপ হলো "Cash Transaction Report" (নগদ লেনদেন রিপোর্ট)। এটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি নগদ লেনদেন হলে BFIU-তে জমা দিতে হয়।


১৩. মানি লন্ডারিং এর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কি?

 উত্তর: Financial Action Task Force (FATF) কর্তৃক প্রণীত ৪০টি সুপারিশ আন্তর্জাতিকভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত।


১৪. FATF কি? 

উত্তর: FATF হলো Financial Action Task Force, যা মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তারে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং দেশগুলোর পরিপালন নিরীক্ষণ করে।


১৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য? 

উত্তর: বাংলাদেশ Asia Pacific Group on Money Laundering (APG) এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং FATF এর সদস্য।


১৬. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) এর ভূমিকা কি?

 উত্তর: BFIU হলো বাংলাদেশের আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা। এটি সন্দেহজনক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করে এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা করে।


১৭. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কি কি? 

উত্তর: প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক লেনদেনের জটিলতা, তথ্যের অভাব, সমন্বয়ের অভাব এবং নতুন নতুন কৌশলের উদ্ভব।


১৮. রিয়েল এস্টেট খাতে মানি লন্ডারিং কিভাবে হতে পারে?

 উত্তর: অবৈধ অর্থ দিয়ে উচ্চ মূল্যে সম্পত্তি ক্রয়, সম্পত্তি নিবন্ধনে কম মূল্য দেখানো, শেল কোম্পানি ব্যবহার করে লেনদেন, অথবা একাধিকবার সম্পত্তি হাতবদল করে অর্থের উৎস গোপন করা।


১৯. ডিজিটাল মুদ্রা (Cryptocurrency) ব্যবহার করে মানি লন্ডারিং এর ঝুঁকি কি? 

উত্তর: ডিজিটাল মুদ্রার বেনামী প্রকৃতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনের সহজলভ্যতা এবং নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে এটি মানি লন্ডারিং এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।


২০. একটি ব্যাংক কখন একটি লেনদেনকে সন্দেহজনক মনে করতে পারে?

 উত্তর: যখন একটি লেনদেন গ্রাহকের স্বাভাবিক লেনদেন পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, অর্থের উৎস বা উদ্দেশ্য অস্পষ্ট, অথবা লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়।


২১. মানি লন্ডারিং অপরাধের জন্য কি ধরনের শাস্তি হতে পারে?

 উত্তর: বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী, এই অপরাধের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, জরিমানা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে।


২২. FATF এর সুপারিশগুলো কি বাধ্যতামূলক?

 উত্তর: FATF এর সুপারিশগুলো আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও, আন্তর্জাতিকভাবে এর পরিপালন না করলে সংশ্লিষ্ট দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা বা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।


২৩. শেল কোম্পানি (Shell Company) কি এবং কেন মানি লন্ডারিং এ ব্যবহৃত হয়?

 উত্তর: শেল কোম্পানি হলো এমন একটি কোম্পানি যার কোনো প্রকৃত ব্যবসা বা সম্পদ নেই, শুধুমাত্র আইনি কাঠামোর মধ্যে এটি বিদ্যমান। মানি লন্ডারিংকারীরা অর্থের উৎস গোপন করতে এবং লেনদেনকে বৈধ দেখাতে এটি ব্যবহার করে।


২৪. ট্রেড-ভিত্তিক মানি লন্ডারিং (Trade-Based Money Laundering - TBML) কি? 

উত্তর: TBML হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাচার করা। এটি সাধারণত পণ্য ও সেবার মূল্য বেশি বা কম দেখিয়ে, ভুল বর্ণনা দিয়ে অথবা ভূয়া চালান ব্যবহার করে করা হয়।


২৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা কি? 

উত্তর: আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মানি লন্ডারিং এর তদন্ত, অপরাধীদের সনাক্তকরণ ও গ্রেফতার, এবং অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


সন্ত্রাসে অর্থায়ন (Terrorist Financing) সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর:


২৬. সন্ত্রাসে অর্থায়ন কি? উত্তর: সন্ত্রাসে অর্থায়ন হলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা সন্ত্রাসী সংগঠনকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এই অর্থ বৈধ বা অবৈধ উৎস থেকে আসতে পারে।


২৭. মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নের মধ্যে মূল পার্থক্য কি? উত্তর: মানি লন্ডারিং এর উদ্দেশ্য হলো অবৈধ অর্থের উৎস গোপন করা, আর সন্ত্রাসে অর্থায়নের উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য অর্থ সরবরাহ করা, সে অর্থ বৈধ উৎস থেকে এলেও।


২৮. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধান আইন কোনটি? উত্তর: সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধিত ২০১৩)।


২৯. সন্ত্রাসে অর্থায়ন কিভাবে করা হয়? উত্তর: এটি বিভিন্ন মাধ্যমে করা হতে পারে, যেমন: সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান, ব্যাংক ট্রান্সফার, রেমিট্যান্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার, দাতব্য সংস্থার ছদ্মবেশে অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি।


৩০. সন্ত্রাসে অর্থায়নের উৎস কি কি হতে পারে? উত্তর: সন্ত্রাসীরা তাদের অর্থায়নের জন্য বৈধ (যেমন: অনুদান, ব্যবসা, চাঁদা) এবং অবৈধ (যেমন: মাদক ব্যবসা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, চোরাচালান) উভয় প্রকার উৎস ব্যবহার করতে পারে।


৩১. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কি? উত্তর: ব্যাংকগুলো সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি চিহ্নিত করতে, সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট করতে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকা (Sanctions List) পরীক্ষা করতে বাধ্য।


৩২. আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকা (Sanctions List) কি? উত্তর: এটি হলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, FATF, বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক চিহ্নিত ব্যক্তি বা সত্তার তালিকা যাদের সাথে লেনদেন করা নিষিদ্ধ।


৩৩. সন্ত্রাস বিরোধী আইনের আওতায় কি ধরনের শাস্তি হতে পারে? উত্তর: সন্ত্রাস বিরোধী আইন অনুযায়ী, সন্ত্রাসে অর্থায়নের জন্য কঠোর শাস্তি, যেমন: দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে।


৩৪. নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন (NPO) বা দাতব্য সংস্থাগুলো কিভাবে সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে? উত্তর: সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো NPO-গুলোর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের বৈধ কার্যক্রমের আড়ালে সন্ত্রাসী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।


৩৫. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কেন জরুরি? উত্তর: সন্ত্রাসবাদের কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই, তাই এটি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক তথ্য বিনিময় এবং সহযোগিতা অপরিহার্য।


৩৬. BFIU সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কিভাবে কাজ করে? উত্তর: BFIU সন্ত্রাসে অর্থায়নের সন্দেহজনক লেনদেন বিশ্লেষণ করে, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তদন্তে সহায়তা করে।


৩৭. সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের সাধারণ কৌশলগুলো কি কি? উত্তর: ছোট ছোট লেনদেন, একাধিক অ্যাকাউন্টের ব্যবহার, প্রিপেইড কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার, এবং ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করা।


৩৮. ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের বিস্তারে অর্থায়ন (Proliferation Financing) কি? উত্তর: এটি হলো ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের (Mass Destruction Weapons) উৎপাদন, অর্জন, স্থানান্তর বা ব্যবহারের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান। এটি সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতোই গুরুতর অপরাধ।


৩৯. PF প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কি? উত্তর: FATF এর সুপারিশে PF প্রতিরোধকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি।


৪০. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে "রিস্ক-ভিত্তিক পদ্ধতি" (Risk-Based Approach) বলতে কি বোঝায়? উত্তর: এর অর্থ হলো যে সমস্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, পণ্য বা ভৌগোলিক এলাকা সন্ত্রাসে অর্থায়নের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোর প্রতি অধিকতর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।


৪১. একটি দেশ কিভাবে সন্ত্রাস অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে পারে? উত্তর: কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার শক্তিশালীকরণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে।


৪২. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংকের কর্মীদের প্রশিক্ষণ কেন জরুরি? উত্তর: প্রশিক্ষিত কর্মীরা সন্দেহজনক লেনদেনগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে এবং দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারে।


৪৩. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রযুক্তি কিভাবে সহায়তা করে? উত্তর: লেনদেন পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার, বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহজনক কার্যকলাপ দ্রুত চিহ্নিত করা যায়।


৪৪. "Compliance Officer" বা পরিপালন কর্মকর্তার ভূমিকা কি? উত্তর: পরিপালন কর্মকর্তা হলেন একজন ব্যক্তি যিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের AML/CFT নীতিমালা, পদ্ধতি এবং আইন মেনে চলা নিশ্চিত করেন।


৪৫. AML/CFT এর ব্যর্থতার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কি ধরনের পরিণতি হতে পারে? উত্তর: বড় অংকের জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া এবং সুনামহানি।


৪৬. মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জাতীয় কৌশলপত্র (National Strategy) এর গুরুত্ব কি? উত্তর: এটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং একটি সামগ্রিক প্রতিরোধ কাঠামো তৈরি করে।


৪৭. বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে? উত্তর: BFIU বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করে।


৪৮. বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কি? উত্তর: বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে AML/CFT সংক্রান্ত নীতিমালা ও নির্দেশনা জারি করে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিপালন নিশ্চিত করে।


৪৯. সীমান্ত অতিক্রমকারী নগদ অর্থ ও বাহক হস্তান্তরযোগ্য যন্ত্রপাতির (Cross-Border Cash and Bearer Negotiable Instruments) ঘোষণাপত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর: এটি অবৈধ অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে সহায়ক, কারণ এটি সীমান্ত অতিক্রমকারী বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ বা যন্ত্রপাতির উৎস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদানে বাধ্য করে।


৫০. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জনগণের ভূমিকা কি? উত্তর: সন্দেহজনক আর্থিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য জানানো এবং অবৈধ লেনদেনে জড়িত না হওয়া।. 

৫১. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ক্যাসিনো বা জুয়ার আসরের ভূমিকা কি? উত্তর: ক্যাসিনো বা জুয়ার আসরগুলো মানি লন্ডারিংয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অবৈধ অর্থ ক্যাসিনোতে এনে জুয়া খেলে জেতার ভান করে বৈধ বলে দেখানো হতে পারে, অথবা চিপস কিনে সেগুলো নগদ টাকায় ফেরত নিয়ে আসা হতে পারে।

৫২. আইনজীবী বা হিসাবরক্ষকরা কিভাবে মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত হতে পারেন? উত্তর: কিছু অসাধু আইনজীবী বা হিসাবরক্ষক তাদের ক্লায়েন্টের পক্ষে শেল কোম্পানি তৈরি করে, বেনামী লেনদেন পরিচালনা করে অথবা ভুয়া দলিলপত্র তৈরি করে মানি লন্ডারিংয়ে সহায়তা করতে পারেন।

৫৩. Designated Non-Financial Businesses and Professions (DNFBPs) বলতে কি বোঝায়? উত্তর: DNFBPs বলতে সেইসব অ-আর্থিক ব্যবসা ও পেশাগুলোকে বোঝায় যেগুলো মানি লন্ডারিংয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, যেমন: রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, জুয়েলারি বিক্রেতা, আইনজীবী, হিসাবরক্ষক এবং ট্রাস্ট ও কোম্পানি সেবা প্রদানকারীরা।

৫৪. Politically Exposed Person (PEP) বলতে কি বোঝায় এবং কেন তারা ঝুঁকিপূর্ণ? উত্তর: PEPs হলেন এমন ব্যক্তি যারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্বে আছেন বা ছিলেন (যেমন: রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা)। তাদের ক্ষমতা ও প্রভাবের কারণে তারা দুর্নীতি বা মানি লন্ডারিংয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।

৫৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে "এন্টি মানি লন্ডারিং সফটওয়্যার" এর গুরুত্ব কি? উত্তর: এই সফটওয়্যারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশাল ডেটা বিশ্লেষণ করে সন্দেহজনক লেনদেন প্যাটার্ন, অস্বাভাবিক কার্যকলাপ এবং উচ্চ-ঝুঁকির গ্রাহকদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, যা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করা কঠিন।

৫৬. "ফিট অ্যান্ড প্রপার" (Fit and Proper) টেস্ট বলতে কি বোঝায়? উত্তর: এটি একটি যাচাই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সততা, দক্ষতা, আর্থিক সক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা পূরণের যোগ্যতা পরীক্ষা করা হয়। এটি আর্থিক খাতের কর্মকর্তাদের নিয়োগে এবং নতুন প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিংয়ে ব্যবহৃত হয়।

৫৭. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে "বেনিফিশিয়াল ওনারশিপ" (Beneficial Ownership) এর ধারণা কেন গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর: বেনিফিশিয়াল ওনারশিপ অর্থ হলো কোনো কোম্পানি বা সম্পত্তির প্রকৃত মালিককে চিহ্নিত করা, এমনকি যদি তা কোনো শেল কোম্পানি বা নমিনির নামেও থাকে। এটি অর্থের চূড়ান্ত উৎস এবং গন্তব্য উন্মোচন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৫৮. "স্ট্রাকচারিং" (Structuring) বলতে কি বোঝায় এবং কেন এটি মানি লন্ডারিংয়ের একটি কৌশল? উত্তর: স্ট্রাকচারিং হলো একটি বড় লেনদেনকে একাধিক ছোট ছোট লেনদেনে ভাগ করা, যাতে তা নির্দিষ্ট রিপোর্টযোগ্য থ্রেশহোল্ডের নিচে থাকে এবং কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যায়। এটি অবৈধ অর্থকে সিস্টেমের মধ্যে প্রবেশ করানোর একটি সাধারণ কৌশল।

৫৯. "স্মার্ফিং" (Smurfing) কি? উত্তর: স্মার্ফিং হলো স্ট্রাকচারিংয়ের একটি ধরন, যেখানে একজন ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠীর একাধিক সদস্য ছোট ছোট পরিমাণের অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেয়, যাতে সেগুলো সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত না হয়।

৬০. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে "সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি" (CBDC) এর সম্ভাব্য প্রভাব কি? উত্তর: CBDC-এর লেনদেন কেন্দ্রীয়ভাবে রেকর্ড করা যাবে, যা অর্থের প্রবাহকে আরও স্বচ্ছ করে তুলবে এবং মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ কমাতে পারে। তবে, এর বাস্তবায়নে নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি হতে পারে।

৬১. "ফিজিক্যাল ক্রস-বর্ডার ট্রান্সপোর্টেশন অফ কারেন্সি" এর ঝুঁকি কি? উত্তর: এটি নগদ অর্থ বা মূল্যবান ধাতু সীমান্ত অতিক্রম করানোর মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাচার করা হয়।

৬২. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের (Internal Controls) গুরুত্ব কি? উত্তর: প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা উচিত, যেমন: দায়িত্বের বিভাজন, নিয়মিত অডিট, কর্মী প্রশিক্ষণ এবং নীতিমালা বাস্তবায়ন, যা অবৈধ কার্যকলাপের ঝুঁকি কমায়


৬৩. সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে "টার্গেটেড ফিনান্সিয়াল স্যানকশনস" (Targeted Financial Sanctions) এর ভূমিকা কি? উত্তর: TSFs হলো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সত্তার (যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা অস্ত্র বিস্তারের সাথে জড়িত) সম্পদ জব্দ করা বা তাদের আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ করা। এটি সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেয়।

৬৪. মানি লন্ডারিং এবং ট্যাক্স এড়িয়ে চলার মধ্যে সম্পর্ক কি? উত্তর: মানি লন্ডারিং প্রায়শই ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার সাথে জড়িত। অবৈধ অর্থের উৎস গোপন করার পাশাপাশি, সেই অর্থের উপর প্রদেয় করও ফাঁকি দেওয়া হয়।

৬৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে "ফরেন্সেক অ্যাকাউন্টেন্টস" (Forensic Accountants) এর ভূমিকা কি? উত্তর: ফরেন্সেক অ্যাকাউন্টেন্টরা জটিল আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক রেকর্ড এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করে আর্থিক অপরাধ, জালিয়াতি এবং মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ উদঘাটন করেন।

৬৬. বাংলাদেশ ব্যাংক কিভাবে AML/CFT পরিপালন নিশ্চিত করে? উত্তর: বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিদর্শন ও অডিট করে, AML/CFT নীতিমালা পরিপালন নিশ্চিত করে এবং লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

৬৭. "রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ" কিভাবে AML/CFT প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে? উত্তর: রাজনৈতিক প্রভাব বা হস্তক্ষেপের কারণে AML/CFT আইন প্রয়োগে শিথিলতা আসতে পারে, যা অপরাধীদের অবাধে অবৈধ কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দেয়।

৬৮. AML/CFT প্রতিরোধে "পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ" (PPP) এর গুরুত্ব কি? উত্তর: PPP হলো সরকারি সংস্থা (যেমন: BFIU, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) এবং বেসরকারি খাতের (যেমন: ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান) মধ্যে তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতা। এটি অপরাধীদের সনাক্তকরণ ও তাদের কার্যকলাপ ব্যাহত করতে অত্যন্ত কার্যকর।

৬৯. "সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অর্থায়ন কৌশল" (Counter-Terrorism Financing Strategy) কি? উত্তর: এটি হলো একটি দেশের সুসংহত পরিকল্পনা যা সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ, তদন্ত এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে।

৭০. AML/CFT পরিপালন ব্যর্থতার জন্য কর্মীদের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা কি? উত্তর: অনেক দেশে, AML/CFT নীতিমালা পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদেরও ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।


জ্বী, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো:

৭১. মানি লন্ডারিং কী?

উত্তর: মানি লন্ডারিং হলো অবৈধভাবে অর্জিত অর্থকে বৈধ উৎসের মাধ্যমে অর্জিত বলে দেখানোর প্রক্রিয়া।

৭২. সন্ত্রাসে অর্থায়ন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: সন্ত্রাসে অর্থায়ন হলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তহবিল সরবরাহ করা।

৭৩. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের মূল উদ্দেশ্য কী?

উত্তর: এর মূল উদ্দেশ্য হলো অপরাধলব্ধ অর্থ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থের ব্যবহার বন্ধ করা।

৭৪. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধান আইন কোনটি?

উত্তর: মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২।

৭৫. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধান আইন কোনটি?

উত্তর: সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধিত ২০১৩)।

৭৬. বিএফআইইউ (BFIU) এর পূর্ণরূপ কী? এর কাজ কী?

উত্তর: বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (Bangladesh Financial Intelligence Unit)। এর কাজ হলো মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে সরবরাহ করা।

৭৭. সন্দেহজনক লেনদেন (Suspicious Transaction) কী?

উত্তর: যে লেনদেন স্বাভাবিক লেনদেনের ধরণ থেকে ভিন্ন এবং যা মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসে অর্থায়নের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ হয়।

৭৮. কেওয়াইসি (KYC) কী? মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে এর গুরুত্ব কী?

উত্তর: নো ইওর কাস্টমার (Know Your Customer)। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়ক।

৭৯. টিপি (TP) কী?

উত্তর: ট্রানজেকশন প্রোফাইল (Transaction Profile)। গ্রাহকের সম্ভাব্য লেনদেনের ধরণ ও পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা দেয়।

৮০. মানি লন্ডারিং এর কয়েকটি স্তর উল্লেখ করুন।

উত্তর: প্লেসমেন্ট (অবৈধ অর্থের প্রাথমিক প্রবেশ), লেয়ারিং (বিভিন্ন জটিল লেনদেনের মাধ্যমে অর্থের উৎস গোপন করা), এবং ইন্টিগ্রেশন (বৈধ আর্থিক ব্যবস্থায় অর্থের একত্রীকরণ)।

৮১. সন্ত্রাসে অর্থায়নের উৎস কী হতে পারে?

উত্তর: বৈধ বা অবৈধ যেকোনো উৎস থেকে সন্ত্রাসে অর্থায়ন হতে পারে। যেমন - চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, এমনকি বৈধ ব্যবসায়ের লভ্যাংশ থেকেও হতে পারে।

৮২. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা কী?

উত্তর: গ্রাহকের সঠিক পরিচিতি নিশ্চিত করা, সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করা ও রিপোর্ট করা, এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা।

৮৩. FATF কী? মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে এর ভূমিকা কী?

উত্তর: ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (Financial Action Task Force)। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং সদস্য দেশগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।

৮৪. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা কারা?

উত্তর: ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমাকারী, মানি চেঞ্জার এবং সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।

৮৫. মানি লন্ডারিং অপরাধের শাস্তি কী?

উত্তর: মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী এর শাস্তি বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।

৮৬. সন্ত্রাসে অর্থায়ন অপরাধের শাস্তি কী?

উত্তর: সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ অনুযায়ী এর শাস্তি বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।

৮৭. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অপরাধগুলো প্রায়শই আন্তঃদেশীয় হয়ে থাকে।

৮৮. ভার্চুয়াল মুদ্রা (যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি) কি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি বাড়াতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেনের অস্বচ্ছতা এবং আন্তঃদেশীয় সহজলভ্যতার কারণে এটি ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৮৯. এনজিও (NGO)-দের মাধ্যমে কি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে এনজিও-দের অপব্যবহার করে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন করা যেতে পারে।

৯০. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জনসচেতনতা কতটা জরুরি?

উত্তর: জনসচেতনতা অপরিহার্য, কারণ সাধারণ মানুষ সচেতন হলে সন্দেহজনক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে এবং এই অপরাধগুলো প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

৯১. কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিরুদ্ধে সুপারিশমালা প্রণয়ন করে?

উত্তর: ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)।

৯২. বাংলাদেশ কি FATF এর সদস্য?

উত্তর: বাংলাদেশ FATF এর কোনো সরাসরি সদস্য নয়, তবে এটি এশিয়া/প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (APG)-এর সদস্য, যা FATF-এর আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা।

৯৩. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে 'প্লেসমেন্ট' স্তরটি কী?

উত্তর: অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ যখন প্রথমবার আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করানো হয়, সেই স্তরটি হলো প্লেসমেন্ট।

৯৪. 'লেয়ারিং' স্তরের মূল উদ্দেশ্য কী?

উত্তর: অর্থের অবৈধ উৎসকে আড়াল করার জন্য জটিল লেনদেনের একটি স্তর তৈরি করা।

৯৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে 'ইন্টিগ্রেশন' স্তরটি কখন ঘটে?

উত্তর: যখন লন্ডারিংকৃত অর্থ বৈধ আর্থিক ব্যবস্থায় এমনভাবে প্রবেশ করে যেন মনে হয় এটি বৈধ উৎস থেকে এসেছে।

৯৬. সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং মানি লন্ডারিংয়ের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?

উত্তর: মানি লন্ডারিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো অবৈধ অর্থকে বৈধ রূপে দেখানো, অন্যদিকে সন্ত্রাসে অর্থায়নের উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য তহবিল সরবরাহ করা, অর্থের উৎস বৈধ বা অবৈধ যাই হোক না কেন।

৯৭. সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (STR) কারা দাখিল করে?

উত্তর: রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাগুলো, যেমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

৯৮. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: প্রযুক্তি সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্তকরণ এবং গ্রাহকের পরিচিতি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৯৯. বেনিফিশিয়াল ওনার (Beneficial Owner) বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: যিনি প্রকৃতপক্ষে কোনো সত্তার মালিক বা নিয়ন্ত্রণকারী অথবা যার পক্ষে লেনদেনটি সম্পন্ন হচ্ছে।

১০০. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন একটি দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে?

উত্তর: এটি আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমাতে পারে এবং দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে।



শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত সমুহ বাংলা অর্থ সহ ।



 রিবা বা সুদ কী?


‘রিবা’ (ربا) একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ “বৃদ্ধি” বা “অতিরিক্ত লাভ”। ইসলামি পরিভাষায় রিবা বলতে বোঝায়:

যেকোনো অতিরিক্ত পরিমাণ বা মূল্য, যা কোনো ঋণ বা বিনিময়ের ওপর নির্ধারিত শর্তহীনভাবে আরোপ করা হয়।


সহজ ভাষায়:

সুদ হলো এমন একটি লেনদেন যেখানে মূল টাকার (মূলধন) উপর নির্দিষ্ট হারে অতিরিক্ত টাকা (সুদ) নেওয়া হয়। যেমন: কেউ ১০,০০০ টাকা ধার দিয়ে ১২,০০০ টাকা ফেরত চায় – এই অতিরিক্ত ২,০০০ টাকা হলো সুদ।



 সুদ (রিবা) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াতসমূহের আরবি পাঠ ও তাদের বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো:



---


১. সূরা আল-বাকারা (২:২৭৫)


আরবি:


الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانْتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ 


বাংলা অনুবাদ:


"যারা সুদ খায়, তারা এমনভাবে দাঁড়াবে, যেভাবে দাঁড়ায় সে ব্যক্তি, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, 'বেচাকেনাও তো সুদের মতোই।' অথচ আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, তার অতীতের গুনাহ তার জন্য মাফ, এবং তার ব্যাপার আল্লাহর কাছে। কিন্তু যারা আবারও ফিরে যায়, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী – তারা তাতে স্থায়ী হবে।" 



---


২. সূরা আল-বাকারা (২:২৭৬)


আরবি:


يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ 


বাংলা অনুবাদ:


"আল্লাহ সুদের মাধ্যমে ধন-সম্পদ ধ্বংস করেন এবং দান-সদকার মাধ্যমে তা বৃদ্ধি করেন। আর আল্লাহ কোন অবাধ্য কাফেরকে পছন্দ করেন না।" 



---


৩. সূরা আল-বাকারা (২:২৭৭)


আরবি:


إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ ۖ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ 


বাংলা অনুবাদ:


"যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে – তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে পুরস্কার। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।" 



---


৪. সূরা আল-বাকারা (২:২৭৮-২৭৯)


আরবি:


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ ۖ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ 


বাংলা অনুবাদ:


"হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যে অংশ বাকি আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা সত্যিকার মুমিন হও।

আর যদি তোমরা তা না করো, তাহলে জেনে রাখো, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা রয়েছে। তবে যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমরা নিজেদের মূলধন পাবে। তোমরা কারও প্রতি জুলুম করো না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না।" 



---


৫. সূরা আলে ইমরান (৩:১৩০)


আরবি:


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ 


বাংলা অনুবাদ:


"হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।" 



---


৬. সূরা আর-রূম (৩০:৩৯)


আরবি:


وَمَا آتَيْتُم مِّن رِّبًا لِّيَرْبُوَا فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوَا عِندَ اللَّهِ ۖ وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُوْلَٰئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ 


বাংলা অনুবাদ:


"তোমরা মানুষের সম্পদে বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য যা সুদ দিয়ে থাকো, তা আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না; কিন্তু তোমরা যা যাকাত দাও, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, তারাই বহু গুণে বৃদ্ধি পায়।" 



---


এই আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে ইসলাম ধর্মে সুদ হারাম এবং এটি সমাজে অন্যায় ও জুলুম সৃষ্টি করে।

রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

এল সি বা লেটার অব ক্রেডিট কি,কত প্রকার,কিভাবে কাজ করে বিস্তারিত।

 


লেটার অব ক্রেডিট বিস্তারিত:


আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক কর্তৃক রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আমদানিকারকের পক্ষে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র বা লেটার অব ক্রেডিট (এল সি) খোলার প্রচলন হয়।


লেটার অব ক্রেডিট বা ঋণপত্র হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ঋণপত্র ইস্যুকারি ব্যাংক রপ্তানিকারকের প্রতি এই মর্মে অপ্রত্যাহারযোগ্য নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, যদি রপ্তানিকারক বা ঋণপত্রের বেনিফিশিয়ারি ঋণপত্রে বর্ণিত শর্তপূরণ সাপেক্ষে ঋণপত্রে নির্দিষ্ট মূল্যের ভিত্তিতে ঋণপত্রে উল্লেখিত পরিমাণ পণ্য বা সেবা রপ্তানি করে ঋণপত্রে বর্ণিত শর্ত পূরণ এর পক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন: ইনভয়েস, প্যাকিংলিষ্ট, পরিবহন দলিল, বিল অব এক্সচেঞ্জ, কান্ট্রি অব অরিজিন ইত্যাদি) ঋণপত্র ইস্যুকারি ব্যাংক বা তার মনোনীত কোন ব্যাংকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করে তাহলে ঋণ ইস্যুকারি ব্যাংক ঋণপত্রের বেনিফিশিয়ারকে মূল্য পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। তাই রপ্তানিকারক এল সি-এর মাধ্যমে তার পণ্যের মূল্য প্রাপ্তি সম্পর্কে যেমন নিশ্চিন্ত হতে পারে তেমনি আমদানিকারকও এল সি-এর বিপরীতে পণ্য প্রাপ্তির পর রপ্তানিকারককে পণ্য মূল্য পরিশোধ করতে পারে।


আমদানিকারকের ধরন

আমদানিকারককে তিনভাগে ভাগ করা যায়:


১. শিল্পকারখানাভিত্তিক আমদানিকারক

২. বাণিজ্যিক আমদানিকারক

৩.ওয়েজ আর্নার বা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারি আমদানিকারক


লেটার অব ক্রেডিটের ধরন

প্রধানত: লেটার অব ক্রেডিট (ইররিভোকেবল) অপ্রত্যাহারযোগ্য প্রকৃতির হয়ে থাকে। এছাড়াও অন্য যেসব ধরনের এল সি হয়ে থাকে তা হচ্ছে:


১.            ট্রান্সফারেবল এল সি

২.            ব্যাক টু ব্যাক এল সি

৩.           রেড ক্লজ এর সি

৪.            গ্রীণ ক্লজ এল সি

৫.            উইথ রিকোর্স এল সি

৬.           উইথাউট রিকোর্স এল সি

৭.            রিভলভিং এল সি

৮.           এ্যাট সাইট এল সি


লেটার অব ক্রেডিট-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত পক্ষসমূহ এল সি-এর সঙ্গে জড়িত পক্ষসমূহ হচ্ছে:


ক. ইম্পোর্টার/বায়ার: যার অনুরোধে ব্যাংক এল সি খোলে তাকে এপ্লিকেন্ট বলে এবং তিনিই ইম্পোর্টার বা বায়ার।


খ. ইস্যুয়িং ব্যাংক: যে ব্যাংক ইম্পোর্টার-এর পক্ষে এল সি খোলে তাকে ইস্যুয়িং ব্যাংক বলে।


গ. রপ্তানিকারক/বিক্রেতা/বেনিফিশিয়ারি: যে পক্ষের অনুকূলে এল সি খোলা হয়ে থাকে রপ্তানিকারক/ বিক্রেতা/ বেনিফিশিয়ারি বলে।


ঘ. এডভাইজিং/নোটিফাইং ব্যাংক: রপ্তানিকারকের দেশে অবস্থিত যে ব্যাংকের মাধ্যমে এল সি এডভাইস পাঠানো হয় তাকে এডভাইজিং ব্যাংক বলে।


ঙ. কনফার্মিং ব্যাংক: যে ব্যাংক ইস্যুয়িং ব্যাংকের অনুরোধে এল সি-তে তার নিশ্চয়তা (কনফার্মেশন) প্রদান করে তাকে কনফার্মিং ব্যাংক বলে। এটা এডভাইজিং ব্যাংকও হতে পারে।


চ. নেগোশিয়েটিং ব্যাংক: এটা এমন এক ব্যাংক (ঋণপত্রে উল্লেখিত ব্যাংক বা ঋণপত্রে উল্লেখ না থাকলেও যেকোন ব্যাংক) যেখানে ঋণপত্রের বেনিফিশিয়ারি উক্ত ঋণপত্রে নিদিষ্ট মূল্যের ভিত্তিতে ঋণপত্রে উল্লেখিত পরিমাণ পণ্য বা সেবা রপ্তানির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস-এর বিপক্ষে ঋণ নিতে সক্ষম।


ছ. পেয়িং-রিইমবার্সিং ব্যাংক: যে ব্যাংকের উপর বিল এর মূল্য দেওয়া হয় তাকেই পেয়িং-রিইমবার্সিং ব্যাংক বলে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইস্যুয়িং ব্যাংকই পেয়িং-রিইমবার্সিং ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। 


লেটার অব ক্রেডিট খুলতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ:


এল সি খুলতে আগ্রহী বায়ার বা ইম্পোর্টার-এর এল সি ইস্যুয়িং ব্যাংক-এ অবশ্যই ব্যাংক একাউন্ট বা ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। এছাড়া এল সি খোলার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন তা হচ্ছে:


১. ইম্পোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আই আর সি) যা চীফ কন্ট্রোলার অব ইম্পোর্ট এ- এক্সপোর্ট (সি সি আই এ- ই) এর দপ্তর থেকে সংগ্রহ করতে হয়।


২. কোন স্বীকৃত চেম্বার বা এসোসিয়েশনের সদস্য সনদ পত্র


৩. ইন্স্যুরেন্স কভার নোট এবং ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম পরিশোধ রশিদ


৪. ইনডেন্ট বা প্রোফর্মা ইনভয়েস (পি আই) এর কপি


৫. টিন সার্টিফিকেট


৬. ট্রেড লাইসেন্স


৭.ভ্যাট সার্টিফিকেট


৮.জাতীয় পরিচয় পত্র কপি


এছাড়া ব্যাংক-এর সরবরাহ করা নিম্নোক্ত কাগজ পত্রাদি পূরণ ও স্বাক্ষর করে জমা দিতে হয়।


১.এল সি এপ্লিকেশন ফরম


২.আই এম পি ফরম


৩. ব্যাংক চুক্তি সংক্রান্ত ডকুমেন্ট


৪. গ্যারান্টি ফরম 


যদি এল সি খোলার সময় জামানত বা সিকিউরিটি প্রদান করতে হয় তাহ’লে উক্ত জামানত বা সিকিউরিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে।


লেটার অব ক্রেডিট সাধারণ আলোচনা


আমদানি-রপ্তানির প্রতি পদে পদে ঝুঁকি বিরাজমান। রপ্তানিকারকের ভয় থাকে যদি ক্রেতা পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হয়। আবার আমদানিকারকের ভয় থাকে অর্থ পেয়ে যদি বিক্রেতা মালামাল না পাঠায়। এক দেশ থেকে আরেক দেশে দূরত্বের কারণে বিরোধ নিষ্পত্তি করা সহজ হয়না। এসব ঝুঁকি এড়াতে পণ্যের ক্রয় বিক্রয়ে লেটার অব ক্রেডিট বা ডকুমেন্টরি ক্রেডিটের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এর মাধ্যমে বিক্রেতাকে এক ধরনের গ্যারান্টি প্রদান করা হয় যে, বিক্রেতা তার পণ্যের মূল্য নিশ্চিতভাবে বুঝে পাবে এবং ক্রেতা এই মর্মে নিশ্চিত হবেন যে, পণ্য তার জিম্মায় না পৌঁছানো পর্যন্ত কোন আর্থিক লেন-দেন সম্পন্ন হবে না। লেটার অব ক্রেডিট হচ্ছে মুলত: ব্যাংকের দেওয়া এক ধরনের গ্যারান্টি যে নির্দিষ্ট বিক্রেতা কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য তার প্রাপ্য সে ক্রেতার কাছ থেকে পাবে। ব্যাংক নিশ্চিত ক’রে বলে দেয়, ক্রেতা ঠিক কোন্ সময়ে কোন্ কোন্ কাগজ পত্রের ভিত্তিতে প্রাপ্য অর্থ পাবে। এর বিনিময়ে বিক্রেতার কাছ থেকে অর্থ পাবার জন্য কঠোর শর্ত পালনের অঙ্গীকার গ্রহন করে থাকে। এর মধ্যে থাকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট- যেমন শিপিং-এর প্রমাণ পত্র-বিল অব লেডিং। 


লেটার অব ক্রেডিট ব্যবহারে বিক্রেতার সুবিধা

ক্রয়-বিক্রয়ে লেটার অব ক্রেডিট ব্যবহারের ফলে ক্রেতা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন যে, সে কত টাকা পাবে বা কোন্ সময়ে পাবে। রপ্তানিকারকের কাছে লেটার অব ক্রেডিট অর্থ প্রাপ্তির নিরাপদ মাধ্যম। অবশ্য এজন্য তাকেও এল সি-তে বর্ণিত শর্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হয়। অর্থ না পাবার ঝুঁকি এল সি-র ক্ষেত্রে ব্যক্তির থেকে ব্যাংকের কাছে হস্তান্তরিত হয়।


ক্রেতার সুবিধা

এল সি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্রেতা নিশ্চিত হয় যে, বিক্রেতা তার শর্ত যথাযথভাবে পূরণ করেছে কারণ প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে ডকুমেন্টরি এভিডেন্স ব্যাংকে জমা দিতে হয়। যেমন পণ্যের শিপমেন্ট হয়েছে কি-না তা বিল অব লেডিংস-এর মাধ্যমে প্রমাণ মেলে। যেহেতু বিল অব লেডিংস শিপিং কোম্পানি অর্থাৎ একটি তৃতীয় পক্ষ প্রদান করে, এখানে ক্রেতা শিপমেন্টের তারিখ নিয়ে ছল-চাতুরি করতে পারে না। তেমনি পণ্যের মানের ক্ষেত্রেও তৃতীয় পক্ষ ইন্সপেকশন কোম্পানি সনদপত্র প্রদান করলে তা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। কারণ অনেক সময় এল সি-তে এই সনদ পত্র জমা দেওয়ার বিধান থাকে এবং ব্যাংক এই সনদ পত্র ব্যতিত ক্রেতার প্রাপ্য অর্থ ছাড় করণের পদক্ষেপ গ্রহন করে না।


তবে মনে রাখা দরকার

লেটার অব ক্রেডিট ব্যবহারের ফলে ক্রেতা বা বিক্রেতা উভয়কেই বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। লেটার অব ক্রেডিট প্রতিপালনের জন্য ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে চার্জ আদায় করে। রপ্তারিকারক হলে তাকে মনে রাখতে হবে লেটার অব ক্রেডিটে বর্ণিত সকল কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করলেই কেবল সে তার প্রাপ্য দাবি করতে পারে, অন্যথায় তার পাওনা আটকে যেতে পারে। লেটার অব ক্রেডিট ব্যবহারের ফলে পণ্য সরবরাহে দেরি হতে পারে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ি সকল আমদানি কেবল লেটার অব ক্রেডিটের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু বিশে^ বেশির ভাগ দেশে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেডিট কার্ড, পে-পাল অথবা টি টি-র মত সহজ ট্রানজেকশন জনপ্রিয়। সেকারণে বেশির ভাগ দেশে এল সি সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন স্বচ্ছন্দ নয়। বাংলাদেশী আমদানিকারকেরা এতে রপ্তানিকারককে লেটার অব ক্রেডিটের বিষয়টি বোঝাতে হিমসিম খায়। বিশেষ ক’রে উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থ যাতে সহজে পাচার হয়ে যেতে না পারে সেজন্য এল সি-র মত পদ্ধতি বাধ্যতামুলক করে থাকে। লেটার অব ক্রেডিট সঠিক ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ করে তবে সঠিক পণ্যের নিশ্চয়তা দেয়না।


লেটার অব ক্রেডিটের ধরন


-ইররিভোকেবল

-রিভোকেবল

-আনকনফার্মড

-কনফার্মড

-ট্রান্সফারেবল


অন্যান্য ধরনগুলো হচ্ছে:


-স্টান্ড-বাই

-রিভলভিং

-ব্যাক টু ব্যাক


রিভোকেবল এবং ইররিভোবেল এল সি


রিভোকেবল এল সি-ও ক্ষেত্রে যে ব্যাংক এল সি-টি ইস্যু করেছে সে ইচ্ছে করলে যেকোন সময়ে বা যেকোন কারণে তা বাতিল করতে পারে। তবে ইররিভোকেবল এল সি-র ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষ একমত না হলে এর কোন পরিবর্তন বা বাতিল করা যায় না।


কনফার্মড এবং আনকনফার্মড লেটার অব ক্রেডিট


ক্রেতা লেটার অব ক্রেডিট যে ব্যাংকে খোলে তাকে ইস্যুয়িং ব্যাংক বলে। বিক্রেতা চায় তার দেশের কোন ব্যাংক সেই লেটার অব ক্রেডিট সঠিক আছে কি-না তা পরীক্ষা ক’রে দেখুক। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য বিক্রেতা চায় যে ব্যাংক (কনফার্মিং ব্যাংক) এটা পরীক্ষা করেছে তারা একটা নিশ্চয়তাও প্রদান করুক। এই নিশ্চয়তা দেওয়ার ফলে ইস্যুয়িং ব্যাংক যদি বিক্রেতাকে পণ্য মূল্য পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় তবে কনফার্মিং ব্যাংক তা পরিশোধ করবে। সেকারণে কনফার্মড লেটার অব ক্রেডিট সবসময় বিক্রেতাকে আনকনফার্মড লেটার অব ক্রেডিটের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দেয়।


ট্রান্সফারেবল লেটার অব ক্রেডিট

ট্রান্সফারেবল লেটার অব ক্রেডিট একজন বেনিফিশিয়ারির কাছ থেকে অপর বেনিফিশিয়ারির কাছে হস্তান্তর করা যায়। এধরনের লেটার অব ক্রেডিট সাধারণতঃ মধ্যস্বত্ব ভোগী জড়িত থাকলে (ক্রয়-বিক্রয়ে) ব্যবহৃত হয়।


স্টান্ড-বাই লেটার অব ক্রেডিট

স্টান্ড-বাই লেটার অব ক্রেডিট হচ্ছে ব্যাংকের এই মর্মে নিশ্চয়তা দেওয়া যে, ক্রেতা পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে সক্ষম এবং বিক্রেতাকে সে মূল্য পরিশোধ করবে।


রিভলভিং লেটার অব ক্রেডিট

একটি রিভলভিং লেটার অব ক্রেডিট হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একাধিক দেনা-পাওনা মেটানোয় সক্ষম এক বিশেষ এল সি।


ব্যাক টু ব্যাক লেটার অব ক্রেডিট

রপ্তারিকারকের অনুকূলে যখন এল সি খোলা হয় কিন্তু পণ্যাদি সরবরাহ করার মত প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের রপ্তানি এল সি টি সহায়ক জামানত হিসেবে রেখে এডভাইজিং ব্যাংকে বা তার দেশীয় কোন ব্যাংক পণ্যের মূল্য সরবরাহকারির অনুকূলে আর একটি এল সি খোলা হলে তাকে ব্যাক টু ব্যাক এল সি বলে। প্রথম এল সি-র প্রায় সব শর্তাবলি অবিকল অবস্থায় দ্বিতীয় এল সি-তে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সাধারণতঃ কোন রপ্তানি এল সি-র বিপরীতে ইউজেন্স ব্যাক টু ব্যাক এল সি খোলা হয়। তবে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফা- স্কীম (ই ডি এঅ এস)-এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থায়নের ব্যবস্থা করে “ এট সাইট ব্যাক টু ব্যাক এল সি” খোলা হয়। দেশের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানি সহায়তা (এক্সপোর্ট ইনসেনটিভ) হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রপ্তানিকারকদের ই ডি এফ সুবিধা প্রদান করে থাকে। এ সুবিধার আওতায় রপ্তানিকারক বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে রপ্তানির বিপরীতে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমদানিকারককে ঋণ গ্রহনের তারিখ হতে ১৮০ দিনের মধ্যে (অনুরোধে ২৭০ দিন) লাইবর রেটের চেয়ে ১% বাড়তি হারে গৃহিত ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশে তৈরী পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাক টু ব্যাক এল সি-র মাধ্যমে পোশাক তৈরীর উপকরণাদি সংগ্রহ করে থাকে। রপ্তানিকারককে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ মোতাবেক ব্যাক টু ব্যাক এল সি খুলতে হয়। ব্যাক টু ব্যাক এল সি-র ক্ষেত্রে নীচের শর্তাবলি অবশ্যই পালন করতে হয়।


(ক) শুধুমাত্র অনুমোদিত রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান যাদের সি সি আই এ- ই থেকে রপ্তানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট আছে এবং বৈধ বন্ডেড ওয়ারহাউস লাইসেন্স আছে তারাই ব্যাক টু ব্যাক এল সি খুলতে পারে। 


(খ) ব্যাক টু ব্যাক এলসি এর মূল্য অবশ্যই মাষ্টার/মাদার এল সি তে উল্লিখিত এফওবি এর মূল্যেও চেয়ে কম হতে হবে ।


(গ) বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বার্টার (স্পেশাল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) এর অধীনে রপ্তানীর ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা যাবে না।


(ঘ) ব্যাক টু ব্যাক আমদানী এলসির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক খ্যতি সম্পন্ন ইন্সপেকশন ফার্ম এর ইন্সপেকশন সার্টিফিকেট সংযোজন করতে হবে।


ব্যাক টু ব্যাক এলসি’র ক্ষেত্রে নিমোক্ত কাগজ ও দলিল দরকার হয় :


১.মাষ্টার এলসি (রপ্তানী এলসি)

২.বৈধ বন্ডেড ওয়ার হাউজ লাইসেন্স

৩.বস্ত্র মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যুকৃত টেক্সটাইল অনুমতিপত্র

৪. লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে যৌথ মূলধনী কোম্পানীর ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট

৫.এলসি অবেদন পত্র

৬. আমদানী অনুমতি পত্র

৭. প্রোফরমা ইনভয়েস/ইন্ডেন্ট

৮. টাকা জমা রশিদসহ ইন্সুরেন্স কভার নোট

৯.পূরণকৃত ও সংরক্ষিত এলসি  ফরম

১০.সি আই বি রিপোর্ট

১১.কোটার ক্ষেত্রে কোটা কাগজপত্র

১২.ট্রেড লাইসেন্স

১৩.বৈধ আইআরসি ও ইআরসি

১৪. বিজিএমই এর সদস্য সার্টিফিকেট

১৫.টিন সার্টিফিকেট


সংগৃহীত। 

রবিবার, ১১ মে, ২০২৫

কর্পোরেট শাখা ও সাধারণ শাখার পার্থক্য।

 


কর্পোরেট শাখা এবং সাধারণ শাখার মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো হলো:

বৈশিষ্ট্যঃ

 কর্পোরেট শাখা বৃহৎ কর্পোরেশন, বহুজাতিক সংস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষায়িত ব্যাংকিং চাহিদা পূরণ করে।

সাধারণ শাখা ব্যক্তিগত গ্রাহক এবং ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসার সাধারণ ব্যাংকিং চাহিদা পূরণ করা। |

 পরিষেবার ধরনঃ 

কর্পোরেট শাখা জটিল আর্থিক সমাধান, যেমন - বৃহৎ ঋণের ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থায়ন, ট্রেজারি পরিষেবা, বিনিয়োগ ব্যাংকিং পরিষেবা ইত্যাদি দেয়।

সাধারণ শাখা মৌলিক ব্যাংকিং পরিষেবা, যেমন - সঞ্চয় ও চলতি হিসাব খোলা, ব্যক্তিগত ঋণ, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, রেমিটেন্স ইত্যাদি দেয়।


 গ্রাহক সম্পর্কঃ 

কর্পোরেট শাখায় প্রতিটি কর্পোরেট ক্লায়েন্টের জন্য ডেডিকেটেড রিলেশনশিপ ম্যানেজার থাকে, যারা তাদের আর্থিক চাহিদা অনুযায়ী বিশেষভাবে পরিষেবা প্রদান করে।

সাধারণ শাখায়  সাধারণত গ্রাহক পরিষেবা প্রতিনিধি থাকেন, তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার উপর তেমন জোর দেওয়া হয় না।


লেনদেনের পরিমাণঃ

কর্পোরেট শাখায়  লেনদেনের পরিমাণ অনেক বেশি এবং জটিল প্রকৃতির হয়ে থাকে। 

সাধারন শখায় লেনদেনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম এবং সরল প্রকৃতির হয়ে থাকে।

ঝুঁকি মূল্যায়নঃ

কর্পোরেট শাখা  বৃহৎ আকারের ঋণ এবং জটিল আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত উচ্চ ঝুঁকি মূল্যায়ন করার সক্ষমতা রাখে। 

সাধারণ শাখা তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকির লেনদেন পরিচালনা করে।

 অবকাঠামোঃ 

কর্পোরেট শাখা প্রায়শই প্রধান শহর বা বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে অবস্থিত এবং বিশেষায়িত সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত। 

সাধারণ শাখা শহর, শহরতলী এবং গ্রামীণ এলাকায় বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে থাকে। |

কর্মকর্তাঃ 

কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তাগন অভিজ্ঞ এবং উচ্চ জ্ঞ্যানসম্পন্ন ব্যাংকার যারা কর্পোরেট ফাইন্যান্স, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ। 

সাধারণ শাখার কর্মকর্তাগন  ব্যাংকিং কার্যক্রম এবং গ্রাহক পরিষেবা সম্পর্কে জ্ঞান সম্পন্ন। 


সংক্ষেপে, কর্পোরেট শাখা বৃহৎ ব্যবসার আর্থিক অংশীদার হিসেবে কাজ করে, যেখানে সাধারণ শাখা ব্যক্তিগত এবং ছোট ব্যবসার দৈনন্দিন ব্যাংকিং চাহিদা মেটায়। উভয় শাখাই ব্যাংকিং ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের নিজ নিজ গ্রাহক শ্রেণির জন্য অপরিহার্য পরিষেবা প্রদান করে।

ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বলতে কি বোঝায়?



ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ( Capital shortfall)  বলতে বোঝায় যখন কোনো ব্যাংকের তার নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত মূলধন থাকে না। এই প্রয়োজনীয়তা সাধারণত ব্যাংকের সম্পদের ঝুঁকির মাত্রার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। মূলধন অপ্রত্যাশিত ক্ষতি শোষণ এবং আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য একটি সুরক্ষা স্তর হিসেবে কাজ করে।

এখানে একটি বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:

 * এটি কী: যখন কোনো ব্যাংকের মূলধন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম স্তরের নিচে নেমে যায়, তখন তাকে মূলধন ঘাটতি বলে। মূলধন সাধারণত মালিকদের প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং ধরে রাখা মুনাফা থেকে আসে।

 * এটি গুরুত্বপূর্ণ কেন: পর্যাপ্ত মূলধন একটি ব্যাংকের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যাংককে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সক্ষম করে:

   * অপ্রত্যাশিত ক্ষতি মোকাবিলা করতে।

   * আমানতকারীদের আস্থা বজায় রাখতে।

   * ঋণ কার্যক্রম সমর্থন করতে।

 * মূলধন ঘাটতির পরিণতি:

   * ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস: মূলধন ঘাটতিযুক্ত ব্যাংকগুলোকে নতুন ঋণ দেওয়া, বিশেষ করে বড় আকারের ঋণ, সীমিত করতে হতে পারে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য।

   * লভ্যাংশ প্রদানে অক্ষমতা: নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো প্রায়শই মূলধন ঘাটতিযুক্ত ব্যাংকগুলোকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান থেকে বিরত রাখে।

   * খ্যাতি ও ক্রেডিট রেটিং-এর ক্ষতি: মূলধন ঘাটতি একটি ব্যাংকের খ্যাতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে ক্রেডিট রেটিং হ্রাস পায়। এর ফলে ব্যাংকটির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে।

   * তদারকি বৃদ্ধি: নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বা ব্যাংকটিকে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে, যেমন আরও মূলধন সংগ্রহ করা বা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ কমানো।

   * ধসের সম্ভাবনা: গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে, মূলধন ঘাটতি ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদী টিকে থাকার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

ব্যাংকগুলোর জন্য ব্যাসেল চুক্তি হলো আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং প্রবিধানের একটি সেট যা ব্যাংকগুলোর জন্য ন্যূনতম মূলধন প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে। সর্বশেষ কাঠামো, ব্যাসেল III, ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম স্তরের সাধারণ ইক্যুইটি এবং একটি মূলধন সংরক্ষণ বাফার বজায় রাখতে নির্দেশ দেয় যাতে তারা ক্ষতি শোষণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাসেল III-এর অধীনে ঝুঁকি-ভারিত সম্পদের কমপক্ষে ৪.৫% সাধারণ ইক্যুইটি টিয়ার ১ (CET1) অনুপাত এবং একটি মূলধন সংরক্ষণ বাফার সহ মোট CET1 প্রয়োজনীয়তা ৭% হতে হবে। মোট মূলধন অনুপাত (টিয়ার ১ + টিয়ার ২ মূলধন) ঝুঁকি-ভারিত সম্পদের কমপক্ষে ৮% হতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে (৮ মে, ২০২৫ পর্যন্ত):

 * বাংলাদেশে ২০টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ১.৭২ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে।

 * এই বৃদ্ধির আংশিক কারণ হলো অ-কার্যকর ঋণের (NPL) বৃদ্ধি এবং এই ঋণগুলোর বিপরীতে বর্ধিত প্রভিশনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা।

 * কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত, ইসলামী এবং বিশেষায়িত ব্যাংক আরও গুরুতর মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সংক্ষেপে, মূলধন ঘাটতি একটি ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যের দুর্বলতা নির্দেশ করে, যা কার্যকরভাবে কাজ করার এবং আর্থিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করতে পারে এবং এর বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে।


শুক্রবার, ৯ মে, ২০২৫

চেক বাউন্স কি?চেক ডিজঅনার কি?

 


চেক ডিজঅনার (Dishonour of Cheque) এবং চেক বাউন্স (Cheque Bounce) প্রায় একই অর্থ বোঝালেও কিছু প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা থাকতে পারে

চেক ডিজঅনার (Dishonour of Cheque):


চেক ডিজঅনার হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে ব্যাংক কোনো কারণে চেকের টাকা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানায়।


চেক ডিজঅনার হওয়ার কারণগুলো:

1. অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই

2. সিগনেচার মিলছে না

3. চেকের তারিখ ভুল (পোস্টডেটেড বা এক্সপায়ার্ড)

4. সংশোধনী দিয়ে লেখা

5. স্টপ পেমেন্ট নির্দেশনা আছে

6. চেকের ফর্ম ক্ষতিগ্রস্ত

7. মুদ্রার অঙ্ক ও কথায় অঙ্কের মিল নেই

8. অ্যাকাউন্ট ফ্রোজেন বা বন্ধ



চেক বাউন্স (Cheque Bounce):


চেক বাউন্স বলতে বোঝায়, ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর চেকটি প্রত্যাখ্যাত হওয়া, সাধারণত অর্থের অভাবে।


চেক বাউন্স সাধারণত কোন কারণে হয়:


অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনীয় ব্যালেন্স না থাকা


ওভারড্রাফট সীমা অতিক্রম


একাধিক চেক একসাথে জমা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নেই



মূল পার্থক্য সংক্ষেপে:


বিষয়ঃ চেক ডিজঅনার চেক বাউন্স


অর্থঃ চেক প্রত্যাখ্যান চেক প্রত্যাখ্যান, বিশেষভাবে অর্থ না থাকার জন্য

কারণঃ যে কোনো কারনে, মূলত অর্থের ঘাটতি

আইনি পদক্ষেপঃ আহতে পারে, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, বিশেষ করে ১৩৮ ধারা অনুযায়ী



আইনি দৃষ্টিকোণ:

বাংলাদেশে চেক বাউন্স ফৌজদারি অপরাধ, যার বিরুদ্ধে Negotiable Instruments Act, Section 138 অনুযায়ী মামলা করা যায়।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন আকু (ACU)।

 


"আকু" (ACU),  হচ্ছে Asian Clearing Union বা আসিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন। এটি একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা যা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পেমেন্ট লেনদেন সহজ করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে।



আসিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন আকু (ACU) কী?যআ

 Clearing Union (ACU) আকু 1974 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর উদ্যোগে। Asian Clearing Union (ACU) এর সদর দপ্তর ইরানের তেহরান শহরে অবস্থিত।

এটি একটি পেমেন্ট ব্যবস্থা যা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য এবং পেমেন্ট নিষ্পত্তি সহজ করে তোলে — যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার বা ইউরো ব্যবহার না করে পারস্পরিক মুদ্রায় লেনদেন করা যায়।



আকু (ACU) কীভাবে কাজ করে?


1. সদস্য দেশসমূহ:

বর্তমানে ACU-এর সদস্য দেশগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, এবং ভূটান।



2. লেনদেন পদ্ধতি:


সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আমদানি-রপ্তানির টাকা ACU মুদ্রা ইউনিটে (যেমন ACU Dollar, ACU Euro) হিসাব করা হয়।


মাস শেষে নিট ব্যালান্স হিসাব করে সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।


এটি ডলার নির্ভরতা কমায় এবং মুদ্রা সংরক্ষণে সহায়তা করে।


3. ক্লিয়ারিং প্রক্রিয়া:


এক মাসের মধ্যে যতগুলো লেনদেন হয়েছে, তার একটি সারাংশ হিসেব করা হয়।


মাস শেষে একবার নেট সেল্টমেন্ট হয় — অর্থাৎ কে কত টাকা পাবে বা দেবে তা নির্ধারিত হয় এবং সেটি পরিশোধ করা হয়।


উদাহরণ:

ধরা যাক, বাংলাদেশ ভারত থেকে ১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং একই সময়ে ভারত বাংলাদেশ থেকে ৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। তাহলে ACU এর মাধ্যমে শুধু ৪ মিলিয়ন ডলারের নিট পেমেন্ট ভারতের কাছে পাঠাতে হবে।


ACU-এর সুবিধা:


ডলার নির্ভরতা কমে।


মুদ্রা সংরক্ষণে সহায়তা করে।


বহুপাক্ষিক লেনদেনের সহজ নিষ্পত্তি হয়।


ক্লিয়ারিং ব্যবস্থা কেন্দ্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় — স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা বাড়ে।



Asian Clearing Union (ACU) ও বাংলাদেশের ভূমিকা


১. বাংলাদেশের সদস্যপদ:


বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ACU-তে যোগ দেয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আরও কার্যকর ও সাশ্রয়ী একটি পদ্ধতি পেয়েছে।


২. বাংলাদেশের উপকারিতা:


ক. বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়:


ACU ব্যবস্থায় লেনদেন মাস শেষে নিট আকারে নিষ্পত্তি হয়। ফলে প্রতিটি লেনদেনের জন্য বারবার ডলার বা ইউরো কেনা লাগে না, এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমে।


খ. দ্রুত নিষ্পত্তি ব্যবস্থা:


ACU মাসিক ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যার ফলে দ্বিপাক্ষিক দেনা-পাওনার হিসাব সহজ হয়।


গ. ব্যাংকিং খরচ হ্রাস:


প্রতিটি লেনদেনের জন্য সুইফট, ব্যাংক চার্জ, ও অন্যান্য মধ্যস্থ খরচ কমে যায়।


৩. ACU লেনদেনের ধরন:


বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অন্য সদস্য দেশের ব্যাংকের সাথে আমদানি/রপ্তানির পেমেন্ট ACU ডলার বা ACU ইউরোতে করা হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই লেনদেনগুলো ক্লিয়ার করে।


৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা:


বাংলাদেশ ব্যাংক ACU-এর একজন সক্রিয় সদস্য।


মাস শেষে অন্যান্য সদস্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে।


ACU-সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে মতামত প্রদান করে।


৫. সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও উদ্যোগ:


চ্যালেঞ্জ:


আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছু সদস্য (যেমন ইরান) এর সাথে লেনদেন জটিল হয়েছে।


বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের সময় ACU পেমেন্টে সাময়িক সমস্যা হয়।



উদ্যোগ:


বাংলাদেশ কখনো কখনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ACU পেমেন্ট স্থগিত রেখেছে বৈদেশিক রিজার্ভ রক্ষার জন্য।


বিকল্প নিষ্পত্তি ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা চলছে (যেমন, চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মুদ্রা বিনিময় চুক্তি)