মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (AML/CFT) একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এখানে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে কিছু মৌলিক প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো:
মানি লন্ডারিং (Money Laundering) সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
১. মানি লন্ডারিং কি?
উত্তর: মানি লন্ডারিং হলো অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ (কালো টাকা) বৈধ উপায়ে অর্জিত বলে দেখানোর প্রক্রিয়া। এটি অবৈধ অর্থের উৎস গোপন করার একটি কৌশল।
২. মানি লন্ডারিং এর প্রধান উদ্দেশ্য কি?
উত্তর: মানি লন্ডারিং এর প্রধান উদ্দেশ্য দুটি: * অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের উৎস গোপন করা। * বৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের ওপর প্রদেয় আয়কর ফাঁকি দেওয়া।
৩. মানি লন্ডারিং এর ধাপগুলো কি কি?
উত্তর: মানি লন্ডারিং এর সাধারণত তিনটি ধাপ রয়েছে: * Placement (স্থাপন): অবৈধ তহবিল আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করানো। * Layering (স্তরবিন্যাস): একাধিক জটিল লেনদেনের মাধ্যমে অর্থের উৎস গোপন করা। * Integration (একীকরণ): ধৌত করা অর্থকে বৈধ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পুনরায় প্রবেশ করানো।
৪. মানি লন্ডারিং কেন একটি ফৌজদারি অপরাধ?
উত্তর: কারণ এটি সমাজে আর্থিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, অবৈধ কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের সুযোগ করে দেয় এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৫. কালো টাকা বলতে কি বোঝায়?
উত্তর: কালো টাকা বলতে এমন অর্থকে বোঝায় যা অবৈধ উপায়ে (যেমন: দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান) অর্জিত হয়েছে অথবা বৈধ উপায়ে অর্জিত হলেও যার উপর কর পরিশোধ করা হয়নি।
৬. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধান আইন কোনটি?
উত্তর: মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫)।
৭. বাংলাদেশ সরকার কেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে?
উত্তর: মানি লন্ডারিং দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে, আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের পথ সুগম করে। তাই সরকার এর প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
৮. মানি লন্ডারিং এর ফলে অর্থনীতিতে কি প্রভাব পড়ে?
উত্তর: এর ফলে বিনিয়োগ কমে যায়, কর্মসংস্থান হ্রাস পায়, উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়। এটি অর্থনীতিতে "আন্তঃরক্তক্ষরণ" হিসেবে বিবেচিত।
৯. ব্যাংকগুলো কিভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তা করে?
উত্তর: ব্যাংকগুলো গ্রাহক সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ (KYC), সন্দেহজনক লেনদেন পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্ট করা (STR), এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তা করে।
১০. KYC এর পূর্ণরূপ কি এবং এর গুরুত্ব কি?
উত্তর: KYC এর পূর্ণরূপ হলো "Know Your Customer" (আপনার গ্রাহককে জানুন)। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের গ্রাহকদের পরিচয়, লেনদেনের উদ্দেশ্য এবং অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১১. STR এর পূর্ণরূপ কি এবং এর ভূমিকা কি?
উত্তর: STR এর পূর্ণরূপ হলো "Suspicious Transaction Report" (সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট)। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন কোনো লেনদেনকে সন্দেহজনক মনে করে, তখন তারা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) কে STR দাখিল করে।
১২. CTR এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর: CTR এর পূর্ণরূপ হলো "Cash Transaction Report" (নগদ লেনদেন রিপোর্ট)। এটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি নগদ লেনদেন হলে BFIU-তে জমা দিতে হয়।
১৩. মানি লন্ডারিং এর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কি?
উত্তর: Financial Action Task Force (FATF) কর্তৃক প্রণীত ৪০টি সুপারিশ আন্তর্জাতিকভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত।
১৪. FATF কি?
উত্তর: FATF হলো Financial Action Task Force, যা মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তারে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং দেশগুলোর পরিপালন নিরীক্ষণ করে।
১৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য?
উত্তর: বাংলাদেশ Asia Pacific Group on Money Laundering (APG) এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং FATF এর সদস্য।
১৬. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) এর ভূমিকা কি?
উত্তর: BFIU হলো বাংলাদেশের আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা। এটি সন্দেহজনক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করে এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা করে।
১৭. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?
উত্তর: প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক লেনদেনের জটিলতা, তথ্যের অভাব, সমন্বয়ের অভাব এবং নতুন নতুন কৌশলের উদ্ভব।
১৮. রিয়েল এস্টেট খাতে মানি লন্ডারিং কিভাবে হতে পারে?
উত্তর: অবৈধ অর্থ দিয়ে উচ্চ মূল্যে সম্পত্তি ক্রয়, সম্পত্তি নিবন্ধনে কম মূল্য দেখানো, শেল কোম্পানি ব্যবহার করে লেনদেন, অথবা একাধিকবার সম্পত্তি হাতবদল করে অর্থের উৎস গোপন করা।
১৯. ডিজিটাল মুদ্রা (Cryptocurrency) ব্যবহার করে মানি লন্ডারিং এর ঝুঁকি কি?
উত্তর: ডিজিটাল মুদ্রার বেনামী প্রকৃতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনের সহজলভ্যতা এবং নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে এটি মানি লন্ডারিং এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
২০. একটি ব্যাংক কখন একটি লেনদেনকে সন্দেহজনক মনে করতে পারে?
উত্তর: যখন একটি লেনদেন গ্রাহকের স্বাভাবিক লেনদেন পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, অর্থের উৎস বা উদ্দেশ্য অস্পষ্ট, অথবা লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়।
২১. মানি লন্ডারিং অপরাধের জন্য কি ধরনের শাস্তি হতে পারে?
উত্তর: বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী, এই অপরাধের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, জরিমানা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে।
২২. FATF এর সুপারিশগুলো কি বাধ্যতামূলক?
উত্তর: FATF এর সুপারিশগুলো আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও, আন্তর্জাতিকভাবে এর পরিপালন না করলে সংশ্লিষ্ট দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা বা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
২৩. শেল কোম্পানি (Shell Company) কি এবং কেন মানি লন্ডারিং এ ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: শেল কোম্পানি হলো এমন একটি কোম্পানি যার কোনো প্রকৃত ব্যবসা বা সম্পদ নেই, শুধুমাত্র আইনি কাঠামোর মধ্যে এটি বিদ্যমান। মানি লন্ডারিংকারীরা অর্থের উৎস গোপন করতে এবং লেনদেনকে বৈধ দেখাতে এটি ব্যবহার করে।
২৪. ট্রেড-ভিত্তিক মানি লন্ডারিং (Trade-Based Money Laundering - TBML) কি?
উত্তর: TBML হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাচার করা। এটি সাধারণত পণ্য ও সেবার মূল্য বেশি বা কম দেখিয়ে, ভুল বর্ণনা দিয়ে অথবা ভূয়া চালান ব্যবহার করে করা হয়।
২৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা কি?
উত্তর: আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মানি লন্ডারিং এর তদন্ত, অপরাধীদের সনাক্তকরণ ও গ্রেফতার, এবং অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সন্ত্রাসে অর্থায়ন (Terrorist Financing) সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
২৬. সন্ত্রাসে অর্থায়ন কি? উত্তর: সন্ত্রাসে অর্থায়ন হলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা সন্ত্রাসী সংগঠনকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এই অর্থ বৈধ বা অবৈধ উৎস থেকে আসতে পারে।
২৭. মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নের মধ্যে মূল পার্থক্য কি? উত্তর: মানি লন্ডারিং এর উদ্দেশ্য হলো অবৈধ অর্থের উৎস গোপন করা, আর সন্ত্রাসে অর্থায়নের উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য অর্থ সরবরাহ করা, সে অর্থ বৈধ উৎস থেকে এলেও।
২৮. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধান আইন কোনটি? উত্তর: সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধিত ২০১৩)।
২৯. সন্ত্রাসে অর্থায়ন কিভাবে করা হয়? উত্তর: এটি বিভিন্ন মাধ্যমে করা হতে পারে, যেমন: সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান, ব্যাংক ট্রান্সফার, রেমিট্যান্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার, দাতব্য সংস্থার ছদ্মবেশে অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি।
৩০. সন্ত্রাসে অর্থায়নের উৎস কি কি হতে পারে? উত্তর: সন্ত্রাসীরা তাদের অর্থায়নের জন্য বৈধ (যেমন: অনুদান, ব্যবসা, চাঁদা) এবং অবৈধ (যেমন: মাদক ব্যবসা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, চোরাচালান) উভয় প্রকার উৎস ব্যবহার করতে পারে।
৩১. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কি? উত্তর: ব্যাংকগুলো সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি চিহ্নিত করতে, সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট করতে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকা (Sanctions List) পরীক্ষা করতে বাধ্য।
৩২. আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকা (Sanctions List) কি? উত্তর: এটি হলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, FATF, বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক চিহ্নিত ব্যক্তি বা সত্তার তালিকা যাদের সাথে লেনদেন করা নিষিদ্ধ।
৩৩. সন্ত্রাস বিরোধী আইনের আওতায় কি ধরনের শাস্তি হতে পারে? উত্তর: সন্ত্রাস বিরোধী আইন অনুযায়ী, সন্ত্রাসে অর্থায়নের জন্য কঠোর শাস্তি, যেমন: দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে।
৩৪. নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন (NPO) বা দাতব্য সংস্থাগুলো কিভাবে সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে? উত্তর: সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো NPO-গুলোর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের বৈধ কার্যক্রমের আড়ালে সন্ত্রাসী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।
৩৫. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কেন জরুরি? উত্তর: সন্ত্রাসবাদের কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই, তাই এটি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক তথ্য বিনিময় এবং সহযোগিতা অপরিহার্য।
৩৬. BFIU সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কিভাবে কাজ করে? উত্তর: BFIU সন্ত্রাসে অর্থায়নের সন্দেহজনক লেনদেন বিশ্লেষণ করে, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তদন্তে সহায়তা করে।
৩৭. সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের সাধারণ কৌশলগুলো কি কি? উত্তর: ছোট ছোট লেনদেন, একাধিক অ্যাকাউন্টের ব্যবহার, প্রিপেইড কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার, এবং ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করা।
৩৮. ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের বিস্তারে অর্থায়ন (Proliferation Financing) কি? উত্তর: এটি হলো ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের (Mass Destruction Weapons) উৎপাদন, অর্জন, স্থানান্তর বা ব্যবহারের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান। এটি সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতোই গুরুতর অপরাধ।
৩৯. PF প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কি? উত্তর: FATF এর সুপারিশে PF প্রতিরোধকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি।
৪০. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে "রিস্ক-ভিত্তিক পদ্ধতি" (Risk-Based Approach) বলতে কি বোঝায়? উত্তর: এর অর্থ হলো যে সমস্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, পণ্য বা ভৌগোলিক এলাকা সন্ত্রাসে অর্থায়নের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোর প্রতি অধিকতর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪১. একটি দেশ কিভাবে সন্ত্রাস অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে পারে? উত্তর: কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার শক্তিশালীকরণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে।
৪২. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংকের কর্মীদের প্রশিক্ষণ কেন জরুরি? উত্তর: প্রশিক্ষিত কর্মীরা সন্দেহজনক লেনদেনগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে এবং দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারে।
৪৩. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রযুক্তি কিভাবে সহায়তা করে? উত্তর: লেনদেন পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার, বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহজনক কার্যকলাপ দ্রুত চিহ্নিত করা যায়।
৪৪. "Compliance Officer" বা পরিপালন কর্মকর্তার ভূমিকা কি? উত্তর: পরিপালন কর্মকর্তা হলেন একজন ব্যক্তি যিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের AML/CFT নীতিমালা, পদ্ধতি এবং আইন মেনে চলা নিশ্চিত করেন।
৪৫. AML/CFT এর ব্যর্থতার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কি ধরনের পরিণতি হতে পারে? উত্তর: বড় অংকের জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া এবং সুনামহানি।
৪৬. মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জাতীয় কৌশলপত্র (National Strategy) এর গুরুত্ব কি? উত্তর: এটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং একটি সামগ্রিক প্রতিরোধ কাঠামো তৈরি করে।
৪৭. বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে? উত্তর: BFIU বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করে।
৪৮. বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কি? উত্তর: বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে AML/CFT সংক্রান্ত নীতিমালা ও নির্দেশনা জারি করে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিপালন নিশ্চিত করে।
৪৯. সীমান্ত অতিক্রমকারী নগদ অর্থ ও বাহক হস্তান্তরযোগ্য যন্ত্রপাতির (Cross-Border Cash and Bearer Negotiable Instruments) ঘোষণাপত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর: এটি অবৈধ অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে সহায়ক, কারণ এটি সীমান্ত অতিক্রমকারী বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ বা যন্ত্রপাতির উৎস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদানে বাধ্য করে।
৫০. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জনগণের ভূমিকা কি? উত্তর: সন্দেহজনক আর্থিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য জানানো এবং অবৈধ লেনদেনে জড়িত না হওয়া।.
৫১. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ক্যাসিনো বা জুয়ার আসরের ভূমিকা কি? উত্তর: ক্যাসিনো বা জুয়ার আসরগুলো মানি লন্ডারিংয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অবৈধ অর্থ ক্যাসিনোতে এনে জুয়া খেলে জেতার ভান করে বৈধ বলে দেখানো হতে পারে, অথবা চিপস কিনে সেগুলো নগদ টাকায় ফেরত নিয়ে আসা হতে পারে।
৫২. আইনজীবী বা হিসাবরক্ষকরা কিভাবে মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত হতে পারেন? উত্তর: কিছু অসাধু আইনজীবী বা হিসাবরক্ষক তাদের ক্লায়েন্টের পক্ষে শেল কোম্পানি তৈরি করে, বেনামী লেনদেন পরিচালনা করে অথবা ভুয়া দলিলপত্র তৈরি করে মানি লন্ডারিংয়ে সহায়তা করতে পারেন।
৫৩. Designated Non-Financial Businesses and Professions (DNFBPs) বলতে কি বোঝায়? উত্তর: DNFBPs বলতে সেইসব অ-আর্থিক ব্যবসা ও পেশাগুলোকে বোঝায় যেগুলো মানি লন্ডারিংয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, যেমন: রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, জুয়েলারি বিক্রেতা, আইনজীবী, হিসাবরক্ষক এবং ট্রাস্ট ও কোম্পানি সেবা প্রদানকারীরা।
৫৪. Politically Exposed Person (PEP) বলতে কি বোঝায় এবং কেন তারা ঝুঁকিপূর্ণ? উত্তর: PEPs হলেন এমন ব্যক্তি যারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্বে আছেন বা ছিলেন (যেমন: রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা)। তাদের ক্ষমতা ও প্রভাবের কারণে তারা দুর্নীতি বা মানি লন্ডারিংয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।
৫৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে "এন্টি মানি লন্ডারিং সফটওয়্যার" এর গুরুত্ব কি? উত্তর: এই সফটওয়্যারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশাল ডেটা বিশ্লেষণ করে সন্দেহজনক লেনদেন প্যাটার্ন, অস্বাভাবিক কার্যকলাপ এবং উচ্চ-ঝুঁকির গ্রাহকদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, যা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করা কঠিন।
৫৬. "ফিট অ্যান্ড প্রপার" (Fit and Proper) টেস্ট বলতে কি বোঝায়? উত্তর: এটি একটি যাচাই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সততা, দক্ষতা, আর্থিক সক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা পূরণের যোগ্যতা পরীক্ষা করা হয়। এটি আর্থিক খাতের কর্মকর্তাদের নিয়োগে এবং নতুন প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিংয়ে ব্যবহৃত হয়।
৫৭. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে "বেনিফিশিয়াল ওনারশিপ" (Beneficial Ownership) এর ধারণা কেন গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর: বেনিফিশিয়াল ওনারশিপ অর্থ হলো কোনো কোম্পানি বা সম্পত্তির প্রকৃত মালিককে চিহ্নিত করা, এমনকি যদি তা কোনো শেল কোম্পানি বা নমিনির নামেও থাকে। এটি অর্থের চূড়ান্ত উৎস এবং গন্তব্য উন্মোচন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫৮. "স্ট্রাকচারিং" (Structuring) বলতে কি বোঝায় এবং কেন এটি মানি লন্ডারিংয়ের একটি কৌশল? উত্তর: স্ট্রাকচারিং হলো একটি বড় লেনদেনকে একাধিক ছোট ছোট লেনদেনে ভাগ করা, যাতে তা নির্দিষ্ট রিপোর্টযোগ্য থ্রেশহোল্ডের নিচে থাকে এবং কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যায়। এটি অবৈধ অর্থকে সিস্টেমের মধ্যে প্রবেশ করানোর একটি সাধারণ কৌশল।
৫৯. "স্মার্ফিং" (Smurfing) কি? উত্তর: স্মার্ফিং হলো স্ট্রাকচারিংয়ের একটি ধরন, যেখানে একজন ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠীর একাধিক সদস্য ছোট ছোট পরিমাণের অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেয়, যাতে সেগুলো সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত না হয়।
৬০. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে "সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি" (CBDC) এর সম্ভাব্য প্রভাব কি? উত্তর: CBDC-এর লেনদেন কেন্দ্রীয়ভাবে রেকর্ড করা যাবে, যা অর্থের প্রবাহকে আরও স্বচ্ছ করে তুলবে এবং মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ কমাতে পারে। তবে, এর বাস্তবায়নে নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি হতে পারে।
৬১. "ফিজিক্যাল ক্রস-বর্ডার ট্রান্সপোর্টেশন অফ কারেন্সি" এর ঝুঁকি কি? উত্তর: এটি নগদ অর্থ বা মূল্যবান ধাতু সীমান্ত অতিক্রম করানোর মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাচার করা হয়।
৬২. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের (Internal Controls) গুরুত্ব কি? উত্তর: প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা উচিত, যেমন: দায়িত্বের বিভাজন, নিয়মিত অডিট, কর্মী প্রশিক্ষণ এবং নীতিমালা বাস্তবায়ন, যা অবৈধ কার্যকলাপের ঝুঁকি কমায়
৬৩. সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে "টার্গেটেড ফিনান্সিয়াল স্যানকশনস" (Targeted Financial Sanctions) এর ভূমিকা কি? উত্তর: TSFs হলো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সত্তার (যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা অস্ত্র বিস্তারের সাথে জড়িত) সম্পদ জব্দ করা বা তাদের আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ করা। এটি সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেয়।
৬৪. মানি লন্ডারিং এবং ট্যাক্স এড়িয়ে চলার মধ্যে সম্পর্ক কি? উত্তর: মানি লন্ডারিং প্রায়শই ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার সাথে জড়িত। অবৈধ অর্থের উৎস গোপন করার পাশাপাশি, সেই অর্থের উপর প্রদেয় করও ফাঁকি দেওয়া হয়।
৬৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে "ফরেন্সেক অ্যাকাউন্টেন্টস" (Forensic Accountants) এর ভূমিকা কি? উত্তর: ফরেন্সেক অ্যাকাউন্টেন্টরা জটিল আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক রেকর্ড এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করে আর্থিক অপরাধ, জালিয়াতি এবং মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ উদঘাটন করেন।
৬৬. বাংলাদেশ ব্যাংক কিভাবে AML/CFT পরিপালন নিশ্চিত করে? উত্তর: বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিদর্শন ও অডিট করে, AML/CFT নীতিমালা পরিপালন নিশ্চিত করে এবং লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
৬৭. "রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ" কিভাবে AML/CFT প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে? উত্তর: রাজনৈতিক প্রভাব বা হস্তক্ষেপের কারণে AML/CFT আইন প্রয়োগে শিথিলতা আসতে পারে, যা অপরাধীদের অবাধে অবৈধ কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দেয়।
৬৮. AML/CFT প্রতিরোধে "পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ" (PPP) এর গুরুত্ব কি? উত্তর: PPP হলো সরকারি সংস্থা (যেমন: BFIU, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) এবং বেসরকারি খাতের (যেমন: ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান) মধ্যে তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতা। এটি অপরাধীদের সনাক্তকরণ ও তাদের কার্যকলাপ ব্যাহত করতে অত্যন্ত কার্যকর।
৬৯. "সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অর্থায়ন কৌশল" (Counter-Terrorism Financing Strategy) কি? উত্তর: এটি হলো একটি দেশের সুসংহত পরিকল্পনা যা সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ, তদন্ত এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে।
৭০. AML/CFT পরিপালন ব্যর্থতার জন্য কর্মীদের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা কি? উত্তর: অনেক দেশে, AML/CFT নীতিমালা পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদেরও ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
জ্বী, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
৭১. মানি লন্ডারিং কী?
উত্তর: মানি লন্ডারিং হলো অবৈধভাবে অর্জিত অর্থকে বৈধ উৎসের মাধ্যমে অর্জিত বলে দেখানোর প্রক্রিয়া।
৭২. সন্ত্রাসে অর্থায়ন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সন্ত্রাসে অর্থায়ন হলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তহবিল সরবরাহ করা।
৭৩. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের মূল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: এর মূল উদ্দেশ্য হলো অপরাধলব্ধ অর্থ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থের ব্যবহার বন্ধ করা।
৭৪. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধান আইন কোনটি?
উত্তর: মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২।
৭৫. সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রধান আইন কোনটি?
উত্তর: সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধিত ২০১৩)।
৭৬. বিএফআইইউ (BFIU) এর পূর্ণরূপ কী? এর কাজ কী?
উত্তর: বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (Bangladesh Financial Intelligence Unit)। এর কাজ হলো মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে সরবরাহ করা।
৭৭. সন্দেহজনক লেনদেন (Suspicious Transaction) কী?
উত্তর: যে লেনদেন স্বাভাবিক লেনদেনের ধরণ থেকে ভিন্ন এবং যা মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসে অর্থায়নের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ হয়।
৭৮. কেওয়াইসি (KYC) কী? মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে এর গুরুত্ব কী?
উত্তর: নো ইওর কাস্টমার (Know Your Customer)। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সহায়ক।
৭৯. টিপি (TP) কী?
উত্তর: ট্রানজেকশন প্রোফাইল (Transaction Profile)। গ্রাহকের সম্ভাব্য লেনদেনের ধরণ ও পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
৮০. মানি লন্ডারিং এর কয়েকটি স্তর উল্লেখ করুন।
উত্তর: প্লেসমেন্ট (অবৈধ অর্থের প্রাথমিক প্রবেশ), লেয়ারিং (বিভিন্ন জটিল লেনদেনের মাধ্যমে অর্থের উৎস গোপন করা), এবং ইন্টিগ্রেশন (বৈধ আর্থিক ব্যবস্থায় অর্থের একত্রীকরণ)।
৮১. সন্ত্রাসে অর্থায়নের উৎস কী হতে পারে?
উত্তর: বৈধ বা অবৈধ যেকোনো উৎস থেকে সন্ত্রাসে অর্থায়ন হতে পারে। যেমন - চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, এমনকি বৈধ ব্যবসায়ের লভ্যাংশ থেকেও হতে পারে।
৮২. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা কী?
উত্তর: গ্রাহকের সঠিক পরিচিতি নিশ্চিত করা, সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করা ও রিপোর্ট করা, এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা।
৮৩. FATF কী? মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে এর ভূমিকা কী?
উত্তর: ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (Financial Action Task Force)। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং সদস্য দেশগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।
৮৪. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা কারা?
উত্তর: ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমাকারী, মানি চেঞ্জার এবং সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
৮৫. মানি লন্ডারিং অপরাধের শাস্তি কী?
উত্তর: মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী এর শাস্তি বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।
৮৬. সন্ত্রাসে অর্থায়ন অপরাধের শাস্তি কী?
উত্তর: সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ অনুযায়ী এর শাস্তি বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।
৮৭. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অপরাধগুলো প্রায়শই আন্তঃদেশীয় হয়ে থাকে।
৮৮. ভার্চুয়াল মুদ্রা (যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি) কি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি বাড়াতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেনের অস্বচ্ছতা এবং আন্তঃদেশীয় সহজলভ্যতার কারণে এটি ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৮৯. এনজিও (NGO)-দের মাধ্যমে কি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন হতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে এনজিও-দের অপব্যবহার করে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন করা যেতে পারে।
৯০. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জনসচেতনতা কতটা জরুরি?
উত্তর: জনসচেতনতা অপরিহার্য, কারণ সাধারণ মানুষ সচেতন হলে সন্দেহজনক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে এবং এই অপরাধগুলো প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
৯১. কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিরুদ্ধে সুপারিশমালা প্রণয়ন করে?
উত্তর: ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)।
৯২. বাংলাদেশ কি FATF এর সদস্য?
উত্তর: বাংলাদেশ FATF এর কোনো সরাসরি সদস্য নয়, তবে এটি এশিয়া/প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (APG)-এর সদস্য, যা FATF-এর আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা।
৯৩. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে 'প্লেসমেন্ট' স্তরটি কী?
উত্তর: অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ যখন প্রথমবার আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করানো হয়, সেই স্তরটি হলো প্লেসমেন্ট।
৯৪. 'লেয়ারিং' স্তরের মূল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: অর্থের অবৈধ উৎসকে আড়াল করার জন্য জটিল লেনদেনের একটি স্তর তৈরি করা।
৯৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে 'ইন্টিগ্রেশন' স্তরটি কখন ঘটে?
উত্তর: যখন লন্ডারিংকৃত অর্থ বৈধ আর্থিক ব্যবস্থায় এমনভাবে প্রবেশ করে যেন মনে হয় এটি বৈধ উৎস থেকে এসেছে।
৯৬. সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং মানি লন্ডারিংয়ের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?
উত্তর: মানি লন্ডারিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো অবৈধ অর্থকে বৈধ রূপে দেখানো, অন্যদিকে সন্ত্রাসে অর্থায়নের উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য তহবিল সরবরাহ করা, অর্থের উৎস বৈধ বা অবৈধ যাই হোক না কেন।
৯৭. সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (STR) কারা দাখিল করে?
উত্তর: রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাগুলো, যেমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
৯৮. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: প্রযুক্তি সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্তকরণ এবং গ্রাহকের পরিচিতি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৯৯. বেনিফিশিয়াল ওনার (Beneficial Owner) বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যিনি প্রকৃতপক্ষে কোনো সত্তার মালিক বা নিয়ন্ত্রণকারী অথবা যার পক্ষে লেনদেনটি সম্পন্ন হচ্ছে।
১০০. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন একটি দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে?
উত্তর: এটি আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমাতে পারে এবং দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

.png)



.jpeg)